দুই কিলোমিটারের মধ্যে ১৮টি সেতু, নেই পারাপারের রাস্তা !

রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় চন্দনা নদীর ওপরে প্রয়োজন নেই সেতুর, তবু দুইটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। আরও একটি নির্মাণকাজ চলছে। দুই কিলোমিটারের মধ্যে কয়েক বছরের মধ্যে ১৮টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

ফলে এখন সেতু বিলাসিতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে উপজেলার দিঘা-খাগড়বাড়িয়া এলাকা।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে নির্মাণকৃত সেতুর মধ্যে অধিকাংশটির পারাপারের জন্য সরকারি কোনো রাস্তা নেই। শুধু অর্থ অপচয় করে নির্মাণ করা হয়েছে এ সেতু।

জানা গেছে, বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের খাগড়বাড়িয়া থেকে দিঘা গ্রামের ভেতর দিয়ে চলমান দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি খালের উপর (চন্দনা নদী) ছোট বড় ১৮টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুগুলের কমবেশি প্রয়োজন থাকলেও খাগড়বাড়িয়া বড় মসজিদের সামনে, দিঘা পূর্বপাড়া (আঠালিয়াপাড়া) ও এর শেষ মাথায় বর্তমানে নির্মাণাধীন সেতু নির্মাণ করে শুধু সরকারের অর্থ অপচয় করা হয়েছে।

বর্তমানে যে সেতুটির নির্মাণকাজ চলছে এটি দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট। এটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা।রোববার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ঠিকাদারের শ্রমিকেরা সেতুর নির্মাণকাজ করছে। উত্তর পাশের রাস্তা দিয়ে সেতুর কাছে গিয়ে দেখা যায়, খালের কাছে গিয়ে রাস্তাটি শেষ হয়েছে। খালের দক্ষিণ পাশে আমবাগান। বাগানের ভেতর দিয়ে দক্ষিণ দিকে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই।

খাগড়বাড়িয়া গ্রামের আম বাগানের মালিক হাশেম আলী বলেন, আমার বাগানের ভেতর দিয়ে সরকারি কোনো রাস্তা নেই। সেখানে রাস্তার কোনো প্রয়োজনও নেই। আঠালিয়াপাড়ার মাঠে যারা গরু-ছাগল চরায়, তারা আগে এক মাঠের ফসল নষ্ট করত, এখন তারা দুই মাঠের ফসল নষ্ট করবে। এখানে সেতু নির্মাণ মানে সরকারের অর্থের অপচয় করা ছাড়া আর কিছু নয়।

এ আম বাগানের মধ্যে এলাকার কিছু শ্রমিক বিশ্রাম নিচ্ছিল। এ সময় তারা বলেন, সরকারের অর্থ অপচয় করা ছাড়া এখানে সেতুর কোনো প্রয়োজন নেই। খাগড়বাড়িয়া এ সেতু থেকে খানিকটা পশ্চিম দিকে দিঘা পূর্বপাড়ায় (আঠালিয়াপাড়া) গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রায় ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৪ ফুট লম্বা একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুর উত্তর পাশেও একই রকম ফসলি জমি। সরকারি কোনো রাস্তা নেই।

খাগড়বাড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ যুথী বেগম বলেন, সেতু হওয়াতে মাঠে যাওয়ার একটু সুবিধা হয়েছে। তবে এত বড় সেতু হবে, এটা কল্পনা করিনি। ওপাশে যেহেতু রাস্তা নাই, এখানে একটা ছোট রিং বসালে মাঠে যাওয়ার কাজ চলত। না চাইতে এত বড় সেতু যখন হয়েছে, ভালো হয়েছে।

খালের উজানে উত্তর দিকে খাগড়বাড়িয়া গ্রামের বড় মসজিদের পাশে একই বছর আরও একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতুটি আরও বড়। এটি ৩০ ফুট লম্বা। এ সেতুর উত্তর পাশে গাড়ি চলাচলের মতো কোনো রাস্তা নেই। উত্তর পাশে কয়েকটি বাড়ি। বাড়িগুলোতে চলাচলের জন্য সেতু রয়েছে।

এ সেতুর প্রায় ৫০ মিটার পূর্ব দিকে একটি বড় সেতু এবং ৫০ মিটার পশ্চিম দিকে আরেকটি ছোট সেতু রয়েছে। এলাকার লোকজন ছোট-বড় দুটি সেতু দিয়ে অনায়াশে চলাচল করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, এখানে কোনো সেতুর প্রয়োজন নেই। তারপরেও মানুষ যতো সুবিধা পাবে, ততোই মানুষের ভালো। সেই ক্ষেত্রে এখানে বড়জোর একটি রিং কালভার্টই যথেষ্ট ছিল।

দিঘা ঋষিপাড়ায় খাল বেশ চওড়া। এখানে খালের ওপর দিয়ে একটি চওড়া রাস্তা রয়েছে। ছোট সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চলচল করে। বড় যে কোনো একটি সেতু এখানে হওয়া উচিত ছিল বলে স্থানীয়রা জানান।

এ বিষয়ে বাউসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক বলেন, সেতু নির্মাণের ব্যাপারে আমার কোনো মতামত নেয়া হয়নি। তবে খাগড়বাড়িয়া বড় মসজিদের পাশে বড় জোর একটি ‘ইউ ড্রেন’ করলে হতো। এতো বড় সেতুর এখানে কোনো প্রয়োজন নেই।

তিনি আরও বলেন, দিঘা পূর্বপাড়ায় যে, সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিরও কোনো প্রয়োজন নেই। উত্তর পাশে যাওয়ার কোনো সরকারি রাস্তা নেই। বর্তমান সেতুটি যেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটিরও কোনো প্রয়োজন নেই। সেখানেও সেতুর দক্ষিণ পাশে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। এ সব কাজের ব্যাপারে আমার কোনো চাহিদা নেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সেতুটি উপজেলার বেলগাছিতে করার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু বেলগাছিতে আরও বড় সেতু লাগবে। এ জন্য জায়গা না পেয়ে সেখানে করা হচ্ছে। সেতুর দক্ষিণ পাশে রাস্তা নেই, এটা আমার জানা নেই।

দিঘা পূর্বপাড়ার সেতুর ব্যাপারে তিনি বলেন, এলাকার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে করা হয়েছে। আর খাগড়বাড়িয়ায় আগে একটি সেতু ছিল। তার স্থলে নতুন সেতু করা হয়েছে। উপজেলায় সেতুর অনেক বরাদ্দ এসেছে দেয়ার জায়গা পাচ্ছি না।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর