স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্কুল পরিচালকসহ গ্রেফতার ৩

শেরপুর জেলা শহরের সজবরখিলা মহল্লার ফৌজিয়া মতিন পাবলিক স্কুলের ছাত্রীনিবাস থেকে আনুসকা আয়াত ওরফে বন্ধন (১৪) নামে নবম শ্রেণী পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় শেরপুর সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৬ জুলাই শনিবার রাতে নিহত বন্ধনের বাবা আনোয়ার জাহিদ ওরফে বাবু মৃধা বাদী হয়ে সদর থানায় ওই মামলা দায়ের করেন।

এদিকে, মামলা গ্রহণের পরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি ফৌজিয়া মতিন পাবলিক স্কুলের পরিচালক আবু ত্বাহা সাদীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। অন্য আসামী দু’জন হচ্ছেন- সাদীর স্ত্রী নাজনীন মোস্তারি নূপুর ও তার বড়ভাই শিবলী।

এদিকে স্থানীয়ভাবে গুঞ্জন উঠেছে, বন্ধন ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকতে পারে। পরবর্তীতে তার লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়ে থাকতে পারে। কিংবা ধর্ষণের শিকার হয়ে সে নিজেও ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। কারো কারো ধারণা, কোনো মনোকষ্টের কারণে কিংবা আবেগতাড়িত হয়ে সে গলায় ফাঁস দিতে পারে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা যাবে। এ ঘটনায় যেহেতু একটি হত্যা মামলা হয়েছে, সেহেতু তদন্ত ছাড়া এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।

এঘটনায় আনুসকার পরিবার ও স্কুল কর্তৃপক্ষের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য উঠে এসেছে। এদিকে নিহত আনুসকা আয়াত ওরফে বন্ধনের ফুফু আনসার ভিডিপির শ্রীবরদী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত অফিসার রৌশনরার দাবী বন্ধনকে হত্যা করা হয়েছে। আর স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবী আনুসকা আয়াত ওরফে বন্ধন রহস্যজনক কারণে ছাত্রীনিবাসে সবার অজান্তে গলায় উড়না পেচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

উল্লেখ্য, শনিবার দুপুরে শেরপুর জেলা হাসপাতাল থেকে পুলিশ আনুসকা আয়াত ওরফে বন্ধনের লাশ উদ্ধার করে। শ্রীবরদী উপজেলার পূর্ব ছনকান্দা গ্রামের ওমান প্রবাসী আনোয়ার জাহিদ বাবু মৃধার মেয়ে বন্ধন শহরের সজবরখিলা এলাকার ফৌজিয়া মতিন পাবলিক স্কুলের ছাত্রীনিবাসে থেকে ওই স্কুলে লেখাপড়া করত।

শনিবার সকালে বন্ধনকে তার কক্ষে উড়না পেঁচিয়ে সিলিংয়ের সঙ্গে ঝুলে থাকতে দেখে এক ছাত্রী চিৎকার দিলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি করেন। এ ঘটনায় শহরে তোলপাড় শুরু হয়।

গ্রেফতারের পূর্বে স্কুলের অধ্যক্ষ আবু তাহা সাদীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আনুশকা তাঁর বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সে স্কুলের ছাত্রীনিবাসের দোতলার একটি কক্ষে থাকতো। তার কক্ষে স্কুলের চতুর্থ শ্রেনীর ও শেরপুর সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের একজন ছাত্রী থাকতো। তিনি বলেন কেন ও কি কারনে বন্ধনের মৃত্যু হয়েছে সে ব্যাপার তিনি কোনো কিছু জানেন না । এ অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর জন্য তিনি দু:খ প্রকাশ করেন।

শেরপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ফৌজিয়া-মতিন পাবলিক স্কুলের ছাত্রী বন্ধনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি হত্যা মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই মামলায় ফৌজিয়া মতিন পাবলিক স্কুলের পরিচালক, তার স্ত্রী ও এক ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরো জানান, ময়নাতদন্তের বিষয়ে এখনো চিকিৎসকের মতামত জানা যায়নি।
এব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি যেহেতু অধিক গুরুত্বপূর্ন তাই তদন্ত সাপেক্ষে কথা বলা উচিত। বিষয়টি পুলিশ গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছে, তদন্ত সাপেক্ষে পরে বিস্তারিত জানাতে পারব।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর