এমনিই মাথা ঠিক নাই

গুলশানের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কাঁচা বাজার- এক কথায় পুরোটাই এখন এক ধ্বংসস্তুপ। এর মধ্যেই কিছু রক্ষা করা যায় কিনা এখন সেসব খুঁজতে ব্যস্ত ব্যাবসায়ী, তাদের স্বজন বা কর্মীরা।

এদের মধ্যে একজন হলেন মোতালেব ব্যাপারী। অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে এই মার্কেটে ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনি। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ আবার ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে তিনি। এই মার্কেটে তার মাছের ব্যবসায়। একের পর এক ফ্রিজ ভর্তি মাছ। মাছসহ ফ্রিজগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও চেষ্টা করছেন রক্ষা করার মতো যদি কিছু পান। আপাতদৃষ্টিতে রক্ষা করা যাবে মনে হওয়ায় কিছু মাছ বাছাই করে একটি ভ্যানে রাখলেন।

জানতে চাইলে আজ শনিবার (৩০ মার্চ) তিনি বলেন, ‘এগুলো সব সামুদ্রিক মাছ। সরিয়ে কোথাও রাখতে হবে। নিয়ে যাচ্ছি। তবে কোথায় রাখবো তা জানি না।’

তিনি আরও জানালেন ছোটবেলা থেকে ৫০-৫৫ বছর যাবত এই মার্কেটে তিনি ব্যবসায়ের সঙ্গে আছেন। দুই বছর আগেও এখানে আগুন লেগেছিল- ওই প্রসঙ্গ টানতেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন তিনি। বললেন, ‘এসব বলে লাভ কী? ক্ষতিপূরণ কেউ দেবে? এমনিই মাথা ঠিক নাই।’

আজ সকালে মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় মোতালেব ব্যাপারীর মতো নবীন-প্রবীণ ব্যবসায়ীরা পুড়ে যাওয়া সহায়-সম্বল সামনে নিয়ে হা-হুতাশ করছেন। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তাদের স্বপ্ন।

প্রসঙ্গত, আজ শনিবার ভোর পৌঁনে ছয়টার দিকে আগুন লাগে রাজধানীর গুলশান ১ নম্বরের এ মার্কেটে। খবর পেয়েই ছুটে আসেন ব্যবসায়ীরা। ততক্ষণে অবশ্য সব শেষ তাদের।

তারা জানালেন, সিটি করপোরেশনের এ মার্কেটে প্রায় ১৮৮টি দোকান ছিলো। সবগুলোই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এই মার্কেটে প্রধানত কাঁচা ও প্যাকেটজাত দুধ, মশলা, খাদ্য ও শিশু পণ্য ইত্যাদির ব্যবসা হত।

আগুন নিয়ন্ত্রণের পর মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, গুলশান ১ নম্বরের এই মার্কেট এখন ধ্বংসস্তূপ। সবদিকে শুধু পুড়ে যাওয়া পণ্যের ছাই। কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই দোকানের। আবার কোনো দোকানের সামনে পড়ে আছে আলু, পেঁয়াজ। পুড়েছে ফ্রিজে থাকা মাছ, মুরগিও। কেউ সর্বস্ব হারিয়ে নির্বাক হয়ে দোকানের সামনে বসে আছেন। কেউ করছেন আহাজারি।

গুলশানের এই মার্কেটের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতে দোকান লাগিয়ে বাসায় যাই। কিন্তু কে জানতো ভোরেই উপার্জনের এই সম্বল হারিয়ে যাবে।

মো. রিপন নামের এক ব্যবসায়ী বলছিলেন, এ দোকানেই ছিল তার সব সম্বল। পাইকারি মশলা বাজারজাত করতেন তিনি। সারাদেশে ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারি পণ্য বিক্রি করতেন তিনি। অনেক ব্যবসায়ীর কাছে বড় অংকের টাকা পাওনা আছেন। কিন্তু সব হিসাবের খাতা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তার দোকানে অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

আরেক ব্যাবসায়ী মো. আরিফ হাসান বলেন, আমরা কেমনে বাঁচবো? উপার্জনের একমাত্র সম্বল দোকানটি হারালাম। অনেক কষ্টের জমানো টাকা দিয়েই দোকানটি দিয়েছিলাম। আগুনে আমার সব শেষ হয়ে গেল।

ভোরে লাগা এ আগুনে অবশ্য কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট কাজ করে। পাশাপাশি কাজ করে সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা।

ঘটনাস্থলে উপস্থিথ হয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ২০১৭ সালে ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লাগার পর কর্তৃপক্ষকে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখার জন্য তিন-চারবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু নোটিশের জবাবে মার্কেট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এর আগে ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিলো। প্রায় দুই বছরের ব্যবধানে আবার ডিএনসিসি মার্কেটের কাঁচাবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর